ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাসহ বেশ কিছু লক্ষ্যবস্তুতে ইসরায়েল শুক্রবার (১৩ জুন) ব্যাপক হামলা চালানোর পর বিশ্ব নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এই হামলায় বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর প্রধানসহ অন্তত ২০ জন শীর্ষ ইরানি কমান্ডারই নিহত হয়েছেন। এছাড়াও নিহত-আহতের লম্বা তালিকা আছে। শুক্রবার (১৩ জুন) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে এএফপি, রয়টার্স, আল-জাজিরা, নিউ ইয়র্ক টাইমসসহ আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমগুলো।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘এই অপরাধের জবাবে ইরানের বৈধ ও শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া ইসরাইলকে অনুতপ্ত করবে। ইরানি জাতি ও নেতৃত্ব চুপ থাকবে না।’
বিশ্বজুড়ে এই সংঘাতের নানা প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হলো
তুরস্ক
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলি দস্যুতা বন্ধ করতে হবে। আমাদের প্রতিবেশী ইরানের ওপর ইসরায়েলের আক্রমণ আন্তর্জাতিক আইনকে উপেক্ষা করে, এটা স্পষ্ট উসকানি ছাড়া আর কিছুই নয়। নেতানিয়াহু ও তার গণহত্যা নেটওয়ার্কের আক্রমণ পুরো বিশ্বকে অস্থির করে রাখছে। তাদের এই আচরণ প্রতিরোধ করতে হবে। ইসরায়েল ইরানের ওপর আক্রমণের মাধ্যমে আমাদের অঞ্চল বিশেষ করে গাজাকে অত্যন্ত বিপজ্জনক পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে।’
ভারত
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আমাকে ফোনে সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেছেন। আমি এই ইস্যুতে ভারতের উদ্বেগের কথা জানিয়েছি এবং জোর দিয়েছি যে এই অঞ্চলে দ্রুত শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করা জরুরি।
রাশিয়া
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে আলাদাভাবে টেলিফোনে কথা বলেন। আলোচনায় তিনি শান্তিপূর্ণ সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলাকে জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে আখ্যায়িত করেন।
নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনালাপে পুতিন বলেন, ‘ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উপায়ে সমাধান করা জরুরি।’
চীন
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, ‘এই ধরনের পদক্ষেপ ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। আমরা সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে আহ্বান জানাই যেন তারা উত্তেজনা না বাড়িয়ে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় ভূমিকা রাখে’।
যুক্তরাষ্ট্র
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘এখনো সময় আছে এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করার। ইসরাইলের কাছে অনেক অস্ত্র আছে এবং তারা জানে কীভাবে তা ব্যবহার করতে হয়।’ ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘ইরান পারমাণবিক বোমা পেতে পারে না। আমরা আবার আলোচনার টেবিলে ফিরতে চাই।’
জাতিসংঘ
মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস দুই পক্ষকে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ দেখানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এই সংঘাত আরও গভীর হলে তা গোটা অঞ্চলের জন্য মারাত্মক হবে।’ বিশেষ করে পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার ঘটনায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন
পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কায়া কাল্লাস বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি অত্যন্ত বিপজ্জনক। উত্তেজনা না বাড়িয়ে কূটনীতিকে অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি’।
ফ্রান্স
প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘সর্বোচ্চ সংযম বজায় রাখতে হবে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বিপন্ন করা যাবে না’।