ইসরায়েলের বিমান হামলা খুব বেশি কাবু করতে পারেনি ইরানকে। ক্ষতি হয়েছে ইরানের মাটি থেকে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের ড্রোন ক্ষেপণাস্ত্রের টার্গেট কিলিং হামলায়। বছরজুড়ে তেহরানের নাকের ডগায় বসেই ভয়াবহ এই হামলার নীলনকশা করেছে মোসাদ। স্বাভাবিকভাবেই ইরানের কোনো নাগরিকের গোপন সহযোগিতা ছাড়া এত বড় পরিকল্পনা সফল হওয়া সম্ভব নয়।
ফলে ২০ সেনা কর্মকর্তা ও ৯ পারমাণবিক বিজ্ঞানীর হত্যাকাণ্ডের পর ইরান এখন সর্বাগ্রে খুঁজে ফিরছে নিজের ঘরের গাদ্দারদের। ইতোমধ্যে পাঁচজন ইসরায়েলি গুপ্তচরকে গ্রেপ্তার করেছে তেহরান।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার বরাতে এমনটাই জানা গেছে। এরইমধ্যে সামনে এসেছে আরও একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য—ইরানের প্রতিবেশী একটি রাষ্ট্র, জর্ডানের ভূমিকা নিয়েও দেখা দিয়েছে সন্দেহ। ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনার মধ্যে জর্ডান হঠাৎ বন্ধ করে দেয় তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর। পাশাপাশি বেসামরিক বিমান চলাচলেও কঠোরতা আরোপ করে।
যদিও প্রকাশ্যে কোনো কারণ জানানো হয়নি, তবে ‘দ্য ক্রাডেল’-এর বরাতে জানা গেছে, এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ থেকে ইসরায়েলের কাছে আসা অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম পরিবহন সহজতর করা।
শুক্রবার (১৩ জুন) রাতের হামলার পর ইরানের বিভিন্ন শহরে শুরু হয় গাদ্দার খোঁজার অভিযান। ইয়াজদ শহরে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, আটককৃতরা মোসাদের হয়ে কাজ করছিল এবং ইরানের কৌশলগত স্থানগুলোর ছবি ও গোপন তথ্য সংগ্রহ করছিল।
তদন্তকারীদের মতে, এই ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে সক্রিয় ছিল এবং তাদের সঙ্গে দেশি-বিদেশি নেটওয়ার্কেরও যোগাযোগ ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের অভ্যন্তরে এই ধরনের গুপ্তচরবৃত্তি নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য বড় হুমকি। এরই মধ্যে ইসরায়েল তেহরান, ইসফাহান ও নাতাঞ্জ শহরে হামলা চালিয়েছে এবং একই সময়ে জর্ডানের আকাশে অচেনা বিমান চলাচলও লক্ষ্য করা গেছে।
জর্ডানের সরকারি বার্তা সংস্থা পেট্রা জানিয়েছে, ইরানের ছোঁড়া ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র জর্ডানের সেনাবাহিনী ভূপতিত করেছে। তারা দাবি করছে, এগুলো জর্ডানের ভূখণ্ডে পড়লে সাধারণ মানুষের জন্য হুমকি হতে পারতো।
তবে মার্কিন থিংক ট্যাংক ‘সেন্টার ফর নিউ আমেরিকান সিকিউরিটি’র বিশ্লেষক জোনাথন লর্ড বলছেন, জর্ডানের এই পদক্ষেপই প্রমাণ করে তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের নিরাপত্তা কৌশলের ঘনিষ্ঠ শরিক।